
সিএনবাংলাদেশ অনলাইন :
বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে শূন্য পদের সংখ্যা তিন লাখের বেশি। পর্যায়ক্রমে শূন্য পদ পূরণে নিয়মিত বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে জনবল নিয়োগ হচ্ছে। তবে কয়েক দফায় বড় ধরনের পদোন্নতিতে জনবল স্ফীত হয়ে পড়েছে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে। সাংগঠনিক কাঠামোয় না থাকলেও পদায়ন করতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। এজন্য সম্প্রতি সচিবের পদমর্যাদায় গ্রেড-১ পদের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে রয়েছেন ৭৪ জন কর্মকর্তা। এর মধ্যে সিনিয়র সচিব ১২ জন। সচিবের পদমর্যাদায় গ্রেড-১ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আরো নয়জন কর্মকর্তা। গত অক্টোবরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং বিসিআইসি ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে সচিব পদমর্যাদা দিয়েছে সরকার। যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসব পদ আগেই গ্রেড-১-এ উন্নীত করা হয়েছিল।
গত বছরের জুনে গ্রেড-১ পদে পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থার শীর্ষ পদকে চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ অনুযায়ী গ্রেড-১-এ উন্নীত করা হয়েছে। এসব পদের মধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোনো সার্ভিস বা কর্মবিভাগ থেকে নিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত নেই। এজন্য অতিরিক্ত সচিবদের পদোন্নতির মাধ্যমে এসব পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে এ আদেশ জারি করা হয়েছে।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত গ্রেড-১ পদের মধ্যে রয়েছে ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক। এছাড়া বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের মহাপরিচালক, এনজিও-বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) চেয়ারম্যান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) কার্যনির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) মহাপরিচালক, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের পদকে গ্রেড-১ হিসেবে তফসিলভুক্ত করা হয় প্রজ্ঞাপনে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে জারি করা এ-সংক্রান্ত আরেকটি প্রজ্ঞাপনে গ্রেড-১ পদে আরো কয়েকটি যুক্ত হয়। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদটিকে গ্রেড-১-এ উন্নীত করা হয়। আর গ্রেড-১ হিসেবে যুক্ত হয় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প করপোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান, রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পর্যটন উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যানের পদ।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাংগঠনিক কাঠামোতে অতিরিক্ত সচিবের পদ না থাকলেও ওই সব মন্ত্রণালয়ে এ পদে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একইভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে যুগ্ম সচিবও।
চলতি বছরের জুনে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে ১৩৬ জন কর্মকর্তাকে। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম বছর জনপ্রশাসনে এটাই প্রথম বড় পদোন্নতির আদেশ। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৩৯১ জনকে যুগ্ম সচিব, আগস্টে ১৫৪ জনকে অতিরিক্ত সচিব ও অক্টোবরে ২৫৬ কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে একসঙ্গে ৩৯১ জন কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এর আগে ২০১৫ সালের জুনে ৮৭৩ কর্মকর্তাকে উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। পরের বছরের মে মাসে এ তিন পদে পদোন্নতি পান ২১৭ কর্মকর্তা। একই বছরের নভেম্বরে উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয় ৫৩৬ জন কর্মকর্তাকে। গত বছরের এপ্রিলে উপসচিব পদে পদোন্নতি পান ২৬৭ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব। ১১ ডিসেম্বর ১২৮ জন যুগ্ম সচিবকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এছাড়া ২২ ডিসেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পান ১৯৩ জন উপসচিব।
তবে ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পদোন্নতিপ্রাপ্তির আগের পদেই সংযুক্ত থেকে কর্মসম্পাদন করবেন। সংযুক্ত উপসচিবরা সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত সচিব বা সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব/যুগ্ম সচিব অথবা সংযুক্ত যুগ্ম সচিবের কাছে নথি উপস্থাপন করবেন। সংযুক্ত যুগ্ম সচিব নথি উপস্থাপন করবেন সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত সচিব ও সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব বা সিনিয়র সচিবের কাছে। এ আদেশ জারির পর থেকে পদোন্নতিপ্রাপ্তরা সংশ্লিষ্ট পদে থেকেই কাজ করছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ৩ লাখ ৮ হাজার ৩৯২টি পদ শূন্য রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনুমোদিত পদসংখ্যা ১৭ লাখ ১০ হাজার ৭০৪। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তার পদ রয়েছে যথাক্রমে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬৩ ও ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৪৫টি। আর তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর অনুমোদিত পদ রয়েছে ১০ লাখ ৭৭৬টি। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর অনুমোদিত পদসংখ্যা ৩ লাখ ২৬ হাজার ৬২০। এসব পদের মধ্যে মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ১৪ হাজার ৩৮৭, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে ১৩ লাখ ১৮ হাজার ২৫৭ এবং স্বায়ত্তশাসিত ও করপোরেশনে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৬০টি অনুমোদিত পদ রয়েছে।
অনুমোদিত এসব পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ১৩ লাখ ৮২ হাজারের বেশি। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৮১৯ জন। আর দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা রয়েছেন ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৬৫ জন। এছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী রয়েছেন যথাক্রমে ৮ লাখ ৪০ হাজার ও ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫৭২ জন।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, শূন্য পদ পূরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ৩৯তম বিসিএসের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারের ৪ হাজার ৭৯২টি পদে নিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সুপারিশ প্রেরণ করেছে। একই সঙ্গে ৪০তম বিসিএসের মাধ্যমে ১ হাজার ৯১৯টি বিভিন্ন ক্যাডারের শূন্য পদে নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব রয়েছে ৫৯৯ জন, যুগ্ম সচিব ৬৭৮, উপসচিব ১ হাজার ৬৯৯, সিনিয়র সহকারী সচিব ১ হাজার ৫১৮ ও সহকারী সচিব ১ হাজার ৫৬৮ জন। এছাড়া বিভাগীয় কমিশনার আটজন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ১৬, জেলা প্রশাসক ৬৪, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ২১২ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রয়েছেন ৪৯১ জন।