
সুনামগঞ্জ (জামালগঞ্জ) প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে জলমহলে নৌকাডুবির ঘটনায় নিহত বাবুল মিয়া (৩৫) লাশ তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহতের পরিবার বলছে, ঘটনার পর ভোরে নিহতের বন্ধুরা তরিঘড়ি করে পুলিশকে না জানিয়ে নিজেরাই বাবুলের লাশ তার বাড়িতে নিয়ে আসে ও দ্রুত দাফনের জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
নিহত বাবুল উপজেলার উত্তর কামলাবাজ গ্রামের হাজি ময়না মিয়ার ছেলে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীমের ছেলে রেজওয়ান মোহাম্মদ সাদী ওরফে বাবু ও তার সহোদর ভাই পারভেজের বন্ধু।
পারভেজ অস্ত্র মামলার আসামি বলে জানা গেছে।
থানা পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রভাবশালী মহলের ভোগদখলে থাকা সুন্দরপুর গ্রুপ জলমহলে জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি রেজাউল করিম শামীমের ছেলে রেজওয়ান মোহাম্মদ সাদী ওরফে বাবুর সঙ্গে রোববার (১০ নভেম্বর) রাতে বাবুলসহ ৭জন একই নৌকায় পাহারায় ছিলেন।
জামালগঞ্জ থানার এসআই মোশারফ হোসেন বলেন, জলমহলে রোববার রাতে বাবুলের সঙ্গে বাবু, ভজন তালুকদার, নিত্য রায়, টুকু মানিক, শিপলু ও সামছুসহ ৭জন ছিলেন।
পুলিশ সূত্র আরো জানায়, রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে জলমহলে টহলকালীন নৌকা ডুবে গেলে তারা ৬ জন সাঁতরে তীরে উঠেন তবে বাবুল নিখোঁজ হয়ে যান।
রাত দেড়টার দিকে বাবুলের পরিবারে নৌকাডুবির খবর জানানো হয়।
নিহতের পারিবারিক সুত্রে অভিযোগ, উপজেলার হরিপুর মৎসজীবী সমবায় সমিতির নামে ইজারাপ্রাপ্ত সুন্দরপুর গ্রুপ জলমহালের ভোগ দখলে থাকা প্রভাবশালীদের প্ররোচনায় সোমবার ভোররাতে থানা পুলিশকে না জানিয়ে জলমহল হতে তরিঘড়ি করে নিহত বাবুলের লাশ দাফনের জন্য তার নিজ বাড়ি উপজেলার উত্তর কামলাবাজ গ্রামে নিয়ে আসতে বাধ্য করা হয়।
ফজরের আজানের পর বাবুলের গ্রাম থেকে পরিবার ও স্বজনরা জলমহলে গিয়ে জাল ফেলে লাশ উদ্ধার করেন।
এরপর জলমহলের ভোগদখলে থাকারাই লাশ দ্রুত বাড়ি নিয়ে গিয়ে দাফনের জন্য নানা চাপ প্রয়োগ করেন।
একপর্যায়ে পুলিশকে না জানিয়ে কোনরকম ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের চেষ্টা চালায় জলমহলের প্রভাবশালীরা। কিন্তু পুলিশের দায়িত্বশীলরা তাতে বাঁধ সাঁধলে তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) জামালগঞ্জ থানার ওসি মো.সাইফুল আলম বাবুলের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সোমবার বেলা সোয়া ১১টায় উপজেলার উত্তর কামলাবাজ গ্রামে নিহতের বসতবাড়ি হতে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এদিকে নিহতের বড়ভাই বাদশা মিয়া বাবুলের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, ঘটনার রাতে আমার ভাইকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির ছেলে বাবু তার সঙ্গে জলমহলে থাকার জন্য নিয়ে যায়। নৌকাডুবির ঘটনা রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার ভেতর ঘটে থাকলেও আমাদের পরিবারকে রাত ১টার দিকে জানানো হয়। বিষয়টি সন্দেহজনক।
তিনি আরো বলেন, সেখানে আদৌ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে কিনা আর কেনই বা ঘটল বিষয়টি আমি বা আমাদের পরিবারের কারও বোধগম্য নয়। তারপরও দেখি পুলিশি তদন্তে কী বেরিয়ে আসে।
জানা গেছে, ওই জলমহলটি স্থানীয় হরিপুর মৎসজীবী সমবায় সমিতির নামে ইজারা নিলেও পরোক্ষভাবে তা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জামালগঞ্জের সাচনা বাজার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শামীমের ছেলে রেজওয়ান মোহাম্মদ সাদী ওরফে বাবু ও তার সহোদর ভাই পারভেজসহ আরো কয়েক প্রভাবশালীর দখলে রয়েছে।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শামীমের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ছেলে রেজওয়ান মোহাম্মদ সাদী সুন্দরপুর গ্রুপ জলমহলের অংশীদার এবং নিহত বাবুল আমার ছেলের বন্ধু ছিলেন।