রহস্যে ঘেরা ভয়ঙ্কর সেই ‘রাজনীতি দ্বীপ!’



অরুন সরকার//

দেশে দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি ও পরিবহন ধর্মঘটে মানুষ এখন দিশেহারা। নামে মাত্র অজুহাত দেখিয়ে বাড়ানো হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এরমধ্যে পরিবহন শ্রমিকরা নিজেরা নিজেদের বিপদ যেমন ডেকে আনছে ঠিক তেমনি জনগণকে ফেলছে মহাবিপদে। যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি নড়বড়ে জনজীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। মানুষের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে এসব তান্ডব লীলায়। বিরোধি দল বিএনপি সহ অন্যান্য সহযোগি অঙ্গ সংগঠন এর গুর বিরোধিতা করলেও টনক নড়ছেনা সরকারের। দেশে সামাজিক ও রাজনৈতীক পরিস্থিতি টালমাটাল। এতে চরম বিপাকে দেশের আপামর জনগণ। কেউ কারও কথা শুনতে নারাজ। গ্রাম-গঞ্জ ও শহরাঞ্চলে শুধু একই প্রলাপ আকাশ ছোঁয়া নিত্যপণ্যের এই দাম কবে কমবে, এর জন্য দায়ী কি সরকার?

চারদিকে ছেয়ে গেছে ‘গোলাভরা টাকা, গোয়াল ভরা দুর্নীতি।’ কারো ক্ষমতা মানেই বিলাস বহুল গাড়ি-বাড়ী ও দেশের টাকা বিদেশে পাচার।ব্যাংকের বদলে কারো বাসা-বাড়িতে মিলছে আবার কোটি, কোটি টাকা। এই রকম ছায়া পড়েছে দুর্নীতিবাজদের মনের আয়নাতে। দেশের ব্যাংক খাত প্রায় দেওলার দিকে। ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্বদিচ্ছাঃ। কিন্তু কোনটাই সঠিক ভাবে হচ্ছে না। নিত্যপণ্যের ডিলার থেকে ব্যবসায়ীরাও দুর্নীতির সেই পথে হাটছেন কি না তার খুজ খবরেও গাফলতি। বাকি থাকল সরকারের আরো অন্যান্য দপ্তর। অনেক সরকারি চাকুরি জীবিরা বেতন ভাতা সহ সকল সুবিধা ভোগ করার পরেও তাদের দুর্নীতি হাটু ঘিরে বসেছে। তার উপরে আবার আমলাতান্ত্রিক জঠিলতা। দেশ উন্নত হবে ‘না’ তলিয়ে যাবে কেউ বুঝে উঠতে পারছি না। একটা সেতুর উদ্বোধনীতে লক্ষ, লক্ষ টাকা খরচ সেখানে প্রাপ্তির আশা কি করা যায়। ধর্মঘট, অবরোধে আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই, নিজেদের বেলায় তাও ভুগে। বর্তমান সময়ে এসে শয়তান বড় করেছে সেই রাজনীতি ও পরিবহন যোগে। মধ্যখানে একটি গোষ্ঠির হয়ে পুতুল সাজছে প্রশাসন। পুড়ে-থেঁতলে-ডুবে ও ভুগে মরার শাস্তি কি আমাদের ভবিতব্য? রহস্যে ঘেরা ভয়ঙ্কর সেই ‘রাজনীতি দ্বীপ’!

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এই যোগে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী সহ আমরা সকলেই অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। সরকার এই ডিজিটালাইজেশন সময়ে এসেও কৃষি আধুনিকায়নের সেই কৃষি পণ্যের দামও আকাশ চুম্বিতে নিয়ে গেছে। এতে খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। মৎস খাত বিলুপ্তির দিকে। মৎস্য খাতের ধারাবাহিক অগ্রগতি ধরে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তৈল, গ্যাস ও জ্বালানি খাতে ভরাডুবি। এর তাপদাহের আগুনে পুড়ে ছাই হচ্ছে সকল শ্রেণী পেশার লোকেরা। বিদ্যুৎ খাতেও টানপোড়ান। আচমকা বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অর্ধেক দেশ নিমজ্জিত হয়ে যায়। এখন সঙ্গি হয়েছে নিত্যদিনের লোডশেডিং। স্বাস্থ্য খাতেও দুর্নীতির কমতি নেই। প্রশাসনিক খাতে তো আর রয়েছেই। বেতন-ভাতা বাড়িয়ে দেয়ার পরেও খাই খাই পরিস্থিতি। চ্যাম্পিয়ন শুধু নিজেদের কবুলীয়ত নামা টিকিয়ে রাখতে। তবে এটাও সত্য, দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তাও ‘মাসীর মাথায় লবণ রেখে বরই খাওয়া’র মতো। জনগণের পকেট কেটে উন্নয়ন ও জনপ্রশাসনের বেতন ভাতা বরাদ্দ করা হচ্ছে। আর সেই ফান্দে পড়েছে জনগণ। দেশের গণতন্ত্র নির্বাসনে। সত্য প্রচার-প্রকাশে ‘আইসিটি’ প্রস্তুত। একথাগুলো বিরোধি রাজনৈতীক দলগুলো বরাবর বলে আসলেও ক্ষমতাসীনরা পাত্তাই দিচ্ছে না। কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি সরকারের উপর গিয়ে পড়ছে। বর্তমানে দেশের প্রজারাও বিদ্রোহী হওয়ার উপক্রম। শুধু সময়ের অপেক্ষা কে কাকে ঘায়েল করবে?

এদিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মেড়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। কারন জেলা-উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায় নির্বাচনে যে সকল পদপ্রার্থীকে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছিল এর বেশির ভাগ প্রার্থীই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিকট পরাজয় বরন করেছেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশনার কোন তোয়াক্ষা করেননি স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্তারা। এর ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় পর্যায়েও। অনেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে এই রং-তামাশায় মুগ্ধ ছিলেন। এতে ক্ষমতাসীনদের একত্মতা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এছাড়া দেশের অনেক সিনিয়র ত্যাগী নেতাকর্মীদের দলের বাহিরে রাখা হয়েছে। কখনও লাফালাফি গ্রুপ দিয়ে বেশি দূর এগানো যায়না। সাংগঠনিক ভাবেও নেতৃস্থানীয় চরম সংকট রয়েছে এই সরকারদলের। সব দপ্তরে একা প্রধানমন্ত্রী নিজে সামাল দিয়ে যাচ্ছেন। পরনির্ভরশীল হওয়াতেই দলে ভঙ্গুর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এছাড়া নির্বাচনি এলাকায় মন্ত্রী-এমপিরা সময় না দেয়া, স্থানীয় জনগণদের যথাযথ মূল্যায়ন না করা, নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা, বিরোধিদের নিয়ে অতিমাত্রায় কটাক্ষ্য ভাষায় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য মন্তব্য করা, ইসলামি দলগুলোকে ছোট করে দেখা, আইসিটি আইন তৈরী করে গণমাধ্যমকর্মীদের দাবির বিপক্ষে যাওয়া, নির্বাচনে সুষ্টু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সহ আরও অনেক কিছু ক্ষমতার অপব্যবহারই কাল হয়ে দাঁড়াবে তাদের জন্য আগামী সংসদ নির্বাচনে। যদিও এর বেশ কিছু অগ্রীম সুবিধা পেয়েছে বিরোধিদল বিএনপি। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর কিছুটা হলেও তারা জনসর্মথন পেয়েছে তা বলার উপেক্ষা রাখে না। তারা আরেক দাপ এগিয়ে গেলও দেশে দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি ও পরিবহন ধর্মঘটের কারনে। এতে বিএনপির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। এতে মানুষ মনে করছে বিএনপির প্রতি আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার জাল বিস্তার করেছে । জালাও পোড়াও ভুলে গেছে সেই জনগণ। সত্যেকার অর্থে আওয়ামী লীগ বুঝে উঠতে পারছে না যে বিএনপি এখন কোন ধরণের সংঘাত-সংঘর্ষে জড়াবে না। তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য রাজনীতির মাঠ সরগরম ও নিজদলীয় নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনামূলক ভাবে সামনের দিকে চাঙা করে এগিয়ে নেয়া। এ থেকে বের হতে হলে আওয়ামী লীগকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। অনতিবিলম্বে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে নিজের অবস্থান পরিস্কার করা অতীব জরুরী।

লেখক ও সাংবাদিক।

শেয়ার করুন!