
এম মুসলিম চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল(মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে স্বামীর লাশ দাফন করে ৫ দিনের মাথায় জীবন নিয়ে ফিরতে পারলেন না জাহেদা বেগমের (৪০)। সোমবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যান জাহেদা বেগম। একই ঘটনায় জাহেদা খাতুনের দুই সন্তান ইমন (১৫) ও সুমি (১০) গুরুতর আহত হয়েছে। তাদের কে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানাযায়, জাহেদার স্বামী গত ৭ নভেম্বর মুসলিম মিয়া এক দুর্ঘটনায় মারা যান এবং জাহেদা বেগম তার দুই সন্তানকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে শনিবার এসেছিলেন শ্রীমঙ্গলের আশিদ্রোন ইউনিয়নের গাজীপুরে তার শ্বশুরবাড়িতে স্বামীর লাশ দাফন করতে। মুসলিম মিয়া চট্টগ্রামের একটি জাহাজে কাজ করতেন । স্বামীর লাশ দাফন শেষে দুই সন্তানকে নিয়ে সোমবার রাতে শ্রীমঙ্গল থেকে আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেসে আবার চট্টগ্রাম ফিরে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যান জাহেদা বেগম। একই ঘটনায় জাহেদা খাতুনের দুই সন্তান ইমন (১৫) ও সুমি (১০) গুরুতর আহত হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে জাহেদা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিলাপ করছেন জাহেদা বেগমের আত্মীয়-স্বজনরা। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া, পাড়া প্রতিবেশীরাও যোগ দিয়েছেন আহাজারিতে।
স্থানীয় বাসিন্দা টিটু মিয়া জানান, শনিবার আমরা জাহেদার স্বামী মুসলিম মিয়াকে দাফন করেছি, সোমবার কুলখানি শেষ করে জাহেদা তার সন্তানদের বার্ষিক পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেখানে যাওয়ার পথেই ট্রেন দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়।
জাহেদা বেগমের ননদ জ্যোৎস্না বেগম বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমরা দুর্ঘটনায় আমার ভাইকে হারাই, তার পাঁচদিনের মাথায় সোমবার রাতে আমরা ভাবিকেও হারিয়ে ফেললাম। আমার ভাইয়ের ছেলে-মেয়েগুলো এখন এতিম হয়ে গেল।
এছাড়াও শ্রীমঙ্গল থেকে খালাতো বোনের বিয়ে শেষে নিজ বাড়ীতে ফিরতে পারলনা চাঁদপুর সদরের বালিয়া ইউনিয়নের বাগাদি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষার্থী ফারজানা। তার ফরম ফিলাপের শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার। এজন্য বিয়ের পুরো অনুষ্ঠান শেষ না করেই বাড়ি ফিরছিল। পথে মর্মাস্তিক একই ট্রেন দুর্ঘটনায় না ফেরার দেশে চলে যায় ফারজানা। গুরুতর আহত হন তার পরিবারের আট সদস্য।
চাঁদপুর বালিয়া ইউনিয়নের তালুকদার বাড়ির কুয়েত প্রবাসী বিল্লাল বেপারীর মেয়ে ফারজানা রহমান। এ ঘটনায় তার সঙ্গে থাকা মা বেবী বেগম, ভাই হাসান বেপারী, নানি ফিরোজা বেগম, মামাতো বোন মিতু, ইবলি, শিশু ধ্রুব ও মামি সাহিদা গুরুতর আহত হন।
ফারজানার ফুপাতো বোন আয়েশা আক্তার জানান, গত মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে খালাতো বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে যায় ফারজানাসহ তাদের পরিবার। ফেরার পথে দুর্ঘটনায় পড়ে। আমাদের পরিবারের আরও আটজন গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি আরো জানান তাদের অনেকে হয়তো পঙ্গুত্ব বরণ করতে হবে ।