
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :
ফাইল ছবি। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নে এক বানরের আক্রমণেই ২৫ জন আহত হয়েছেন। তার ভয়ে পুরো এলাকার মানুষ তটস্থ। গত এক মাস ধরে এই অবস্থা বিরাজ করছে। গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ বানরের আক্রমণে তানিয়া বেগম (৮) নামের এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে। চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গত এক মাসে বানরটি সেলিম আহমদ (৮), মারুফ আহমদ (১০), বিউটি বেগম (১১) ছাড়াও রোকনপুর, বড়খলা, কাঠালতলী ও গৌড়নগর এলাকার শিশুসহ প্রায় ২৫ জনকে আঁচড়ে-কামড়ে আহত করেছে। আহতদের বেশির ভাগের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নে কয়েকটি চা বাগান ও বনাঞ্চল রয়েছে। পাহাড় ও চা বাগানে অনেক বানরের বাস। এরা অনেক সময় খাবারের সন্ধানে দলবলে লোকালয়ে এসে খেতের ফসল খেয়ে কিংবা নষ্ট করে চলে যায়। কিন্তু মানুষের ওপর কখনো আক্রমণ করেনি। গত এক মাস আগে গলায় লাল রঙের রসি বাধা অবস্থায় একটি বানর লোকালয়ে দেখা যায়।
হঠাৎ করে বানরটি মানুষের ওপর আক্রমণ শুরু করেছে। ভোরবেলা, দুপুর ও সন্ধ্যায় একা পেলেই লোকজনের ওপর হামলা করছে। বেশিরভাগ আক্রমণের শিকার হচ্ছে স্কুলগামী শিশুরা। এতে শিশুসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভয়ে অনেক শিশু স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বিভিন্ন সময় যে সকল শিশুকে আক্রমণ করেছে তাদের অবস্থা গুরুতর। বানরের ভয়ে কেউ একা বের হন না।
কখন কাকে আক্রমণ করে বসে এই আতঙ্ক বিরাজ করছে এলাকায়। বানরের আক্রমণ হতে পরিত্রাণ পেতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বড়লেখা উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। রবিবার এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আরো কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে স্থানীয়ভাবে। তাৎক্ষণিক তাদের পরিচয় জানা যায়নি।
বড়লেখার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন রবিবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে বলেন, ‘শিশুসহ প্রায় ২৫ জনকে বানরটি আক্রমণ করে আহত করেছে। যাদের আক্রমণ করেছে তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। মানুষ ভয়ে তটস্থ। ভয়ে একা কেউ বের হন না। স্কুলের বাচ্চাদের বেশি আক্রমণ করে। প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা চলছে। অভিভাবকরা খুব আতঙ্কে আছেন। কখন কাকে একা পেয়ে আক্রমণ করে। বন বিভাগকে জানিয়েছিলাম। তাদের লোকজন রবিবার স্পট দেখে গেছেন।’
বন বিভাগের বড়লেখা রেঞ্জের সহযোগী কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস রবিবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে এলাকা পরিদর্শন করেছি। বানরটির গলায় লাল রঙের রসি বাধা। মনে হচ্ছে কারো পোষা বানর হতে পারে। অস্বাভাবিক আচরণ করায় ছেড়ে দিয়েছে।
আমাদের অফিসে বানর ধরার কোনো যন্ত্রপাতি নেই। বিষয়টি মৌলভীবাজার বন্য প্রাণী রেঞ্জকে জানানো হয়। তারা রবিবার (১৭ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখে গেছেন। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে গেছেন। দুই-একদিনের মধ্যে তারা ঢাকা থেকে যন্ত্রপাতি নিয়ে আসবে। বানরটির অবস্থান কোথায় কোথায় আছে, তারা ম্যাপ করে নিয়ে গেছেন।’