
অরুন সরকার :
সারা বিশ্বেরন্যায় বাংলাদেশের জনগণের মধ্যেও বিরাজ করছে করোনা আতংকের চাপ। খুলে দেওয়া হচ্ছে অফিস-আদালত, শপিংমল সহ গণপরিহন চালুর ব্যবস্থা। কিন্তু পিছু ছাড়ছে না এই মরণঘাতি নোবেল ভাইরাস (কোভিড-১৯)। জীবনের ঝুকি নিয়ে সবাই ছুটছে এদিক-ওদিক। অনেকে সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক ব্যবহার বা সচেতনতায় তেমন কোন গুরুত্ব আরোপ করছে না। একে অপরে ঘেষাঘেষি করে চলছে জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন। স্বল্প পরিসরে অফিস-আদালত, শপিংমল সহ গণপরিহন খোলা থাকলেও এখন আর তার কোন বাদ বালাই নেই। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রথমে জননিরাপত্তায় কঠোর উদ্দ্যেগ গ্রহণ করলেও বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত লাজুক। বিশেষ করে ঈদ আনন্দের পরবর্তী সময়টা যেন ভয়াবহ রুপ ধারণ না করে। বর্তমানে দেখা যায় মানুষ করোনার ভয় যেন জয় করে ফিরেছে মাঠে। প্রকাশ্যে দিবালোকে তাদের আনাগুনা। থেমে নেই কিন্তু করোনা শনাক্তের হার বা মৃত্যু মিছিল। এরমধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে অফিস-আদালত, শপিংমল সহ গণপরিহন চালুর ব্যবস্থা। এতে কি মুক্তি পাওয়া যাবে সেই করোনা নামক ভয়াল থাবা থেকে। বিন্দুমাত্র সেই নিশ্চয়তার লেশ কেউ দিতে পারছে না। তাহলে কেন এতো তরিঘরি। মানা হচ্ছেনা কেন সরকারের দিক-নির্দেশনামূলক বিভিন্ন ধরনের নির্দেশিকা।
‘‘পুরো দেশ আজ ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করছে। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে দেশের বেশ কিছু জেলা-অঞ্চল। কোনটাই সঠিকভাবে সফল করা যাচ্ছে না। টানপোড়ান আর অভাব অনটনে দিনাতিপাত করছে এসব এলাকার মানুষ। দুর্গতরা রয়েছে স্বাস্থ্যঝুকির চরম বিপাকে। তার উপরে আবার করোনার বিশাল থাবা। ঘার মুচকে পড়েছে দেশের নিম্ন-মধ্য আয়ের মানুষের। সকলেই এবার ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টায়। তাই বলে কি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে। ইতিমধ্যেই আমরা হারিয়েছি অনেক জ্ঞানী গুণী সহ অসংখ্য ব্যক্তিকে, অনেকে হারিয়েছে তারা তাদের পরিবারের সদস্যদেরও। তারা হয়তো আর আমাদের মধ্যে কখনও ফিরে আসবে না। তারপরেও কেন খোলা আকাশের নিচে এতো সাজসজ্জা। বিশ্বের অন্যান্য প্রভাবশালী দেশগুলোর দিকে থাকালে দেখা যায় শুধু লাশের মিছিল, স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আকাশ। লক্ষ লক্ষ প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মরনঘাতি কোভিড-১৯। এনিয়ে যদিও নিয়মিত সতর্কতামূলক বক্তব্য প্রদান করে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’ (ডব্লিউএইচও)। তাদের মতে লকডাউন শিথিল করলেই আছড়াবে দ্বিতীয় ঝড়।’’
এদিকে সোমবার (৩ আগষ্ট) জেনেভায় এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেছেন, বিশ্বে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৮১ লাখের বেশি। মৃতের সংখ্যা ৬ লাখ ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে। যদিও ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চলছে। তবে কোন জাদুকরি সমাধান হয়ত কোনদিন মিলবেনা, স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরতে বহু সময় লাগবে। এসময় তিনি বিভিন্ন দেশের সরকার এবং জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। মুখে মাস্ক পড়াটা বিশ্বজুড়ে সংহতির প্রতীক হয়ে ওঠা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। এতকিছুর পরও আমাদের সচেতনতাই ভাটা পড়েছে। আজ ভার্চ্যুয়াল আদালত উপেক্ষা করে খোলা ময়দানে ফিরে এসেছি। দোকানপাট, হাট-বাজার, শপিংমল ও গণপরিবহন চালিয়ে দিচ্ছি প্রকাশ্যে।
‘‘আমরা যদি একটু পেছনের দিকে থাকাই তাহলে দেখতে পারব বাংলাদেশ সরকারের এক একটি সিদ্ধান্ত ছিল অত্যন্ত চমকপ্রদ। বিশেষ করে করোনা মোকাবেলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মানষকণ্যা দেশ নেত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। গোঠা দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় ছিল অগ্রণী ভূমিকা যা এখনও রয়েছে। কিন্তু ইদানিং ব্যতিক্রমি কিছু সিদ্ধান্তে বির্তকের সৃষ্টি করছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অটল সিদ্ধান্ত থাকলেও অফিস-আদালত, শপিংমল সহ গণপরিহন চালু ব্যবস্থা ভাবিয়ে তুলছে দেশের আপামর জনসাধারনকে। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগিয়েছে ডালাওভাবে কেন খুলে দেওয়া হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। এমনতো নয় যে, এর পেছনে কাজ করছে কোন স্বার্থান্বেষী মহল? সরকারকে বেকায়দায় ও বির্তকে ফেলতে এই সাজসজ্জা।’’
লক্ষ্য করলে দেখা যায়, প্রশাসনের প্রত্যেকটি খাতে রয়েছে চৌকুশ বাহিনী। তারা দেশ ও জনগণের কল্যাণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। করোনাকালীন সময়েও তাদের ভূমিকা ছিল দেখার মতো। তারা তাদের নিজের জীবণ বাজি রেখে জনস্বার্থে একযোগে কাজ করে গেছেন। এনিয়ে তারা বেশ সূনাম অর্জন করেছে ইতিমধ্যে। দেশে জঙ্গি নির্মূল থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়িয়েছে এক’কাতারে। অনিয়ম দুর্ণীতির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ছিল লক্ষ্যনীয় । আর এর পেছনে সৎসাহস যোগীয়েছেন দেশ নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দল মত নির্বিশেষে তার অবস্থান খুবই স্পষ্ট। ন্যায়ের পক্ষে তিনি জিহাদ ঘোষণা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয় একদিকে তিনি বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশকে পরিচিতি লাভ করিয়েছেন অন্যদিকে দেশের উন্নয়নে ভাবমূর্তী উজ্বল করে নৌকাদির হাল ধরিয়ে গতি ঠিক রাখছেন। এখন দেখার বিষয় শুধু করোনাভাইরাস মোকাবেলায় শেষ পদক্ষেপ কি নিতে পারেন তিনি।
সাংবাদিক ও লেখক।