সিলেটের গোয়াইনঘাটে মামলা করে বিপাকে এক ইমাম পরিবার



সিএনবাংলাদেশ অনলাইন :

সিলেটের গোয়াইনঘাটে প্রভাবশালীদের হামলা ও মামলার ভয়ে গ্রাম ছেড়ে ২ বছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এক ইমাম পরিবার। প্রভাবশালী এবং পুলিশ কর্তৃক ইমামের বসতঘর গুঁড়িয়ে দেওয়াসহ হামলা মামলার প্রতিকার চেয়ে শনিবার সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তোয়াকুল ইউনিয়নের ফুলতৈলছগাম গ্রামের মুশাহিদ আলী।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৮৮ সালে আমার পিতা তজমুল আলী ওরফে তোজমুল আলী ফুলতৈলছগাম মৌজার অন্তর্ভুক্ত জেএলনং-১৭১ এসএ সার্ভে রেকর্ডকৃত ১৫৭ ও ৪৪ খতিয়ানের ৪১০ ও ৪০৮ দাগের ৩৮শতক ভূমি রেজিস্ট্রার দলিল নং ৩৫৮২ মাধ্যমে ক্রয় করেন। গত দুই বছর থেকে একই গ্রামের তৈয়ব আলীর পুত্র ছয়ফুল আলম ও তার ভাইয়েরা ক্রয় করা ভূমির ১৭ শতক জোর পূর্বক দখল করে মালিকানা দাবি করে। তখন বিএস জরিপের প্রিন্ট পরচা সংগ্রহ করে দেখেন ১৭ শতক ভূমি ছয়ফুল আলম ছল চাতুরী করে তার নামে রেকর্ড করিয়েছে।

ছয়ফুল আলমরা প্রভাবশালী হওয়ায় গ্রামের সালিশানদের কাছে ন্যায় বিচার না পেয়ে সিলেটের যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে সত্ত মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ছয়ফুল আলম, তাজ উদ্দিন, আমির উদ্দিনসহ ১৭ জনকে আসামী দেওয়া হয়। ভুমি সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা দায়েরে প্রভাবশালীরা আরো হিংস্র হয়ে ওঠে। মামলার বিষয়টি জেনে গ্রামের সালিশানরা আপোষে নিস্পত্তির লক্ষ্যে ১ লক্ষ টাকা জামানত ধার্য করেন। আমরা গরিব এতো টাকা দিতে অপারগতা জানালে আমার পরিবারকে একঘরে করা হয়। জোরপূর্বক গ্রামের রাস্তা দিয়ে চলতে বাধা ও দোকান থেকে সদাই পাতিও ক্রয় করতে দেওয়া হতো না। গ্রামের একটি উন্নয়ন ফান্ডে থাকা ২৪ হাজার টাকা আমরা একঘরে থাকায় এখনো পাইনি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত আবেদন করেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

মামলা দায়েরের পর আদালত মামলাটি তদন্তে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশকে নির্দেশ দিলে সালুটিকর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যের সহযোগীতায় প্রভাবশালীরা আমার বসতঘর গুঁড়িয়ে দেয়। ভুমি দখলের জেরে প্রভাবশালীর লোকজন একাধিকবার অতর্কিত হামলা ও মারপিটের ঘটনায় মুশাহিদ আলীর ভাই আজিজুর রহমান সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতে মামলা দায়ের করেন। প্রভাশালীরা একতরফাভাবে তদন্ত প্রতিবেদন প্রভাবিত করে তাদের পক্ষে নেয়।

পুন:তদন্তের দাবি জানালে মামলাটি পুন: তদন্তে জেলা গোয়েন্দা সংস্থাকে (ডিবি) দায়িত্ব দেন আদালত। এ ঘটনার জের ধরে আসামি আমীদের লোকজন মুশাহিদ আলীর ভাতিজা মারজানকে অপহরণ করে। অপহরণের খবর পেয়ে আমরা মারজানকে উদ্ধারে গেলে নারী-পুরুষের ওপর হামলা ও নারীদের শ্লীলতানহানী করা হয়।

এ ঘটনায় মুশাহিদ আলীর ভাগিনা জামাল হোসেন ১৫ জনকে আসামী করে সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ তদন্তের নামে আমাদের ভয় দেখিয়ে বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাত করে। সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মহিউদ্দিন আমাকে বারবার মোবাইলে কল দিয়ে তার সাথে দেখা করার কথা বলছেন। দেখা না করলে মামলা দেয়ারও হুমকি দিচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে সাজানো মামলার পাঁয়তারা এবং মাদকদ্রব্য ও বিভিন্ন অবৈধ অন্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তাদের দেওয়া মামলায় মুশাহিদ আলীসহ ১০জন জামিনে আছেন। প্রভাবশালীদের হাত থেকে রক্ষা, নিরাপত্তা ও মামলার সুষ্ট তদন্তের জন্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন মুশাহিদ আলী।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্তিত ছিলেন তজমুল আলী, আজিজুর রহমান, মফিজুর রহমান, মোছাম্মৎ আয়শা বেগম, মোছাম্মৎ রুজিনা বেগম, মরিয়ম আক্তার শাম্মি, কাওছার আহমদ।

শেয়ার করুন!