
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় কিশোর গ্যাং’র তিন সদস্যকে আটক করেছে সুনামগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
সোমবার সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান (পিপিএম) গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আটককৃত সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে তাহিরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার আসামী ও আটককৃতরা হলেন, জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট উত্তর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের শাহজাহানের ছেলে রাজিব হোসেন ওরফে রাজিব হাসান (১৮), একই ইউনিয়নের পৈলনপুর গ্রামের নানু মিয়ার ছেলে মোরসালিন আহমদ (১৮) ও ঘাগড়া গ্রামের অহিদ মিয়ার ছেলে রতন মিয়া (২৪)।
চুরি করে নিয়ে যাওয়া একটি মোটরসাইকেল বিক্রির চেষ্টাকালে রবিবার সন্ধায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী চৌমুহনী বাজার হতে ওই তিন মোটরসাইকেল চোরকে ডিবি পুলিশ আটক করে। এ সময় তাদের হেফাজতে থাকা চুরি হওয়া একটি প্লাটিনা ১০০ সিসি মোটরসাইকেল আলামত হিসাবে ডিবি পুলিশ জব্দ করে।
সোমবার দুপুরে তাহিরপুর উপজেলার বড়দল উওর ইউনিয়নের পৈলনপুর গ্রামের রহমত আলীর ছেলে ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলাম আটক তিন জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা দু’জনসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে তাহিরপুর থানায় মোটরসাইকেল চুরির একটি মামলা দায়ের করেন।
সুনামগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মিডিয়া সেলের সমন্বয়কারি এসআই আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ব্যবসায়ী খায়রুলের গ্রামের বাড়ি তাহিরপুরের পৈলনপুর হতে তারই মালিকানাধীন একটি প্লাটিনা মোটরসাইকেল গত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সন্ধার পর ধৃত প্রধান আসামী রাজিবের নেতৃত্বে একদল সংঘবদ্ধ চোর কৌশলে গাড়ির লক (তালা ভেঙে) চুরি করে নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে মোটরসাইকেলটি রবিবার বিকেলে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার চৌমুহনী বাজারে বিক্রয়ের চেষ্টাকালে বাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ীগণ ও উপস্থিত জনতার সন্দেহের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে গাড়ি চোর চক্রের দুই সদস্য কৌশলে পালিয়ে যায়।
এরপর উক্তেজিত ব্যবসায়ীগণ ও জনতা কিছুটা উক্তম মধ্যম দিয়ে মোটরসাইকেলসহ গাড়ি চোর চক্রের মুল হোতা রাজিব সহ তিন সদস্যকে আটক রেখে ডিবি পুলিশে খবর দেন।
রাজিবের সাথে আটককৃত মোরসালিন আহমদ উপজেলার বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র। তার বাবা উপজেলার পৈলনপুর গ্রামের বাসিন্দা নানু মিয়া বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাট বাজারের একজন কাপড় ব্যবসায়ী।
এ জুটির হাতে গত কয়েকমাসে বাদাঘাট বাজারে কয়েকটি ছোট খাটো মারামারি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে আসা ডজন খানেক স্কুল ছাত্র তাদের তৈরী কিশোর গ্যাং’র সদস্যদের হাতে ইতিমধ্যে মারধরের শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দামি মুঠোফোন ব্যবহার করা, অপ্রাপ্ত বয়সে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালনা, বখাটেপনা, স্কুল ছাত্রীদের যৌন হয়রানী করা ছাড়াও স্টেপ আতংক সৃষ্টি, হামলা-মারধর, হুমকি দিয়ে নিরীহ পরিবারের কিশোর ও স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক ভয়-ভীতি ছড়িয়ে দিয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে মানসিক চাঁপে রেখে এলাকার নিরীহ কিশোর ও স্কুল ছাত্রদের ভয় ভীতি দেখিয়ে বশে আনতে এ কিশোর গ্যাং’র সদস্যরা প্রকাশ্যে গোপনে ধারালো চাঁকু, নাইফ, পানচ, লোহার রড, কাঠের রোল প্রায়ই সাথে নিয়ে চলাফেরা করতো।
রাজিব-মোরসালিন জুঠির আদলে উপজেলার বাদাঘাট এলাকায় বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ছাড়াও অন্য দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও আরো একাধিক কিশোর গ্যাং তৈরী করা হয়েছে। এসব কিশোর গ্যাং এখন এলাকার নিরীহ পরিবারের স্কুল কলেজ মাদ্রাসাগামী ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য মানসিক চাঁপ, যৌন হয়রানী ও আতংক সৃষ্টি করছে।