
রাবি প্রতিনিধি :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাদশ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ,ছবি । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাদশতম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেছেন, আদর্শ, প্রচেষ্টা, বৃত্তি, পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস ছাড়া শিক্ষা মূল্যহীন। তাই একজন শিক্ষককে হতে হবে আদর্শ ও ন্যায়নীতির প্রতীক।
তিনি বলেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যেসব খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা দেখে আচার্য হিসেবে আমাকে মর্মাহত করে। আজকাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষকরা প্রশাসনের বিভিন্ন পদ-পদবি পাওয়ার লোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে ঠিকমতো অংশ না নিয়ে বিভিন্ন লবিংয়ে ব্যস্ত থাকেন। অনেকে আবার নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতেও পিছপা হন না। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ভুলে গিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্নিষ্ট লেনদেনে সম্পৃক্ত হন। এটি অত্যন্ত অসম্মানের ও অমর্যাদাকর।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজশাহীতে শেখ কামাল স্টেডিয়ামে বক্তৃতাকালে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, মনে রাখবেন, আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সাধারণ মানুষ আপনাদের সম্মান ও মর্যাদার উচ্চ আসনেই দেখতে চায়। তাই ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার জন্য নীতি ও আদর্শের সঙ্গে আপস করবেন না। আপনাদের মর্যাদা আপনাদেরই সমুন্নত রাখতে হবে। ব্যক্তিস্বার্থের কাছে আদর্শ যাতে ভূলুণ্ঠিত না হয়, সে দায়িত্ব আপনাদেরই নিতে হবে।
শিক্ষকদের রাজনীতি নিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, আপনারা রাজনৈতিকভাবে খুবই সচেতন ব্যক্তিত্ব। রাজনৈতিক মতাদর্শ ও চিন্তা-চেতনায় একজনের সঙ্গে আরেকজনের পার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব যেন প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষার্থীর ওপর না পড়ে, তাও নিশ্চিত করতে হবে।
গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা দেশের উচ্চতর মানবসম্পদ। দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে ও অগ্রগতি নির্ভর করছে তোমাদের ওপর। তোমাদের তারুণ্য জ্ঞান, মেধা ও প্রজ্ঞা হবে দেশের উন্নয়নে প্রধান চালিকাশক্তি। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে একজন গ্র্যাজুয়েট হিসেবে সব সময় সত্য ও ন্যায়কে সমুন্নত রাখবে। নৈতিকতা ও দৃঢ়তা দিয়ে দুর্নীতি ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে। বিবেকের কাছে কখনও পরাজিত হবে না।
২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে। জাতীয় তাৎপর্যবাহী এ দুটি অনুষ্ঠান সাড়ম্ব্বরে উদযাপনে গ্র্যাজুয়েটসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার অবদান রাখবে বলে তিনি আশা করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। যখন শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী। সরকারকে অবহিত করলে সরকার স্বপ্রণোদিত হয়ে তা পূরণ করবে। অন্যায়ভাবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে জিম্মি করা হলে তা সরকার বরদাশত করবে না। শিক্ষকদের স্বচ্ছতার মাধ্যমে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি।
সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ভারতের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রঞ্জন চক্রবর্তী। এতে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান, উপ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা, চৌধুরী মো. জাকারিয়া, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক একেএম মোস্তাফিজুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এমএ বারী।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাংসদ অধ্যাপক ডা. মনসুর রহমান, সাংসদ আয়েন উদ্দীন প্রমুখ।