Sex Cams

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভারসাম্য কোথায়?



অরুন সরকার :

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা তথ্য প্রযুক্তি আইন সাংবাদিকদের উপর প্রভাব বিস্তার করছে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে মানবাধিকার লংঙ্গন করে একের পর এক মামলা দায়ের করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্থে। কখনো ট্রাইব্যুনালে আবার কখনো থানা পুলিশ ও র‌্যাব’র টেবিলে। কোনরকম সুষ্ট তদন্ত ছাড়াই এসব মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এতে সরেজমিন সাক্ষ্য প্রমাণের কোন প্রয়োজন পড়ছেনা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়টি তলিয়ে দেখছেন কি না রয়েছে যথেষ্ট সংশয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা তথ্য প্রযুক্তি আইনকে বর্তমানে ঢালাওভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে এটা কোন সন্দেহ নেই। এ থেকে রেহাই মিলছে না বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকদেরও।

একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের একজন ব্যক্তির যেমন অধিকার হরন করার কারো কোন এখতেয়ার নেই ঠিক তেমনি ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করার ক্ষমতা কাউকে দেয়া হয়নি।’ যথেচ্ছামতো এই আইন এখন চালিয়ে দেয়া হচ্ছে নাগরীকের নাকের ঢগায়। তবে সবচেয়ে বেশি এর প্রভাব পড়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতায়। কোন ব্যক্তি বা প্রতিস্ঠানের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা মাত্রই সেই প্রভাবশালী ব্যক্তি বা প্রতিস্ঠানের মালিক মামলা টুকে বসেন। একই অবস্থা রাজনৈতীক ব্যক্তিবর্গদেরও। তাও নাকি আবার মানহানিকর মূল্যের কোটি কোটি টাকার মামলা। কি অদ্ভুদ এই আইনের বেড়াজাল। একদিকে অভিযোগ দাখিল অন্যদিকে যাচাই-বাছাই ছাড়াই মামলা এফ আই আর, অতঃপর গ্রেপ্তার..!

এবার আসা যাক মূল আলোচনায়- একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা তথ্য প্রযুক্তি আইন কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা বয়ে আনতে পারবে সেটাও সরকারের দেখার বিষয় রয়েছে। বর্তমান সময়কালে যে সকল মামলা দায়ের হচ্ছে তা লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সরকারদলের কোন নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী, সরকারি চাকুরিজীবি বা সেই সব প্রতিস্ঠানের মালিকরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি মামলাগুলো দায়ের করছেন। অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রযন্ত্রকেও ব্যবহার করা হচ্ছে।

উদাহরণ স্বরুপ বলা যেতে পারে কোন দেশের রাষ্ট্র প্রধান ও গুরুত্বপুর্নসহ যেকোন ব্যক্তিকে নিয়ে যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি প্রচার/ভাইরালসহ কেউ কুরুচিপুর্ন বক্তব্য, কটুক্তি করে তাকে তাহলে সেই তথ্য সন্ত্রাসদের আইনের আওতায় আনতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা যেতেই পারে । কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের দেশে এই আইনের মোটেই ভারসাম্য নেই। কারন সচরাচর দেখা যায় সরকারদলের লোকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তি যখন এরকম কিছু মন্তব্য করে সাথে সাথেই সেই অপরাধিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসছে আইনশৃংখলা বাহিনী। অথচ যদি বিরোধীদলের কারও বিরুদ্ধে কিছু মন্তব্য করা হয় তাহলে সেই বাহিনী হাত পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকে। তাহলে সেই আইনের ভারসাম্য কোথায়?

সকাল হলেই প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ অনলাইন গণমাধ্যম অনুসরণ করলে দেখা যায় কোথাও না কোথাও কোন সাংবাদিক এই আইনের মারপ্যচে পড়ে তাকে চ্যম্পিয়ান্স বানিয়ে কারাগারে পাটিয়ে দেয়া হচ্ছে। এরপর শুরু হয় আদালত নিয়ে টানা হেচড়া। জামিন পেতে হলে দৌড়ঝাঁপ দিতে হয় ঢাকায়। অনেক জেলার বিচারকবৃন্দ এই আইনের সংবিধানের বইটি আজও ঠিকমতো পড়েছেন কি না রয়েছে সংশয়। জামিন দেয়া তো দূরের কথা। তখন গাছতলায় দিব্যি ছায়ার মধ্যে চুপচাপ শুয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই। কি যে হয়রানী যে পড়ে সে জানে।

হ য ব র ল অবস্থায় চলছে সেই তথ্য প্রযুক্তির খেলা। তবে আজ না হয় কাল এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া যে দেখা দিবেনা তা কেউ জানে না। হাতের কলমকে আটকাতে এই আইন পাশ করা হয়েছে কি না তাও নিয়ে সমগ্র মহলে এখন আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এর খেশারত আওয়ামী লীগ সরকারকে দিতে হবে কি না তার কোন নিশ্চয়তাও নেই। কারন ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। তাই সময় থাকতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে আরো বেশি সজাগ থাকা প্রয়োজন। পাশাপাশি আইনশৃংখলা বাহিনীকে সংযত থেকে ধৈর্য্য সহকারে মোকাবেলা করতে হবে। তাড়াহুড়া’র মধ্যে মামলা রের্কড না করে সূষ্ট তদন্তের মাধ্যমে মামলা রের্কড হলে তখন আর কোন অজুর আপত্তি থাকবে না। কারন এমন কিছু সাংবাদিকদের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে যার কোন ভিত্তি নেই। দেখা যাবে ই-মেইল ইনবক্সে কোন ব্যক্তির সেন্ড/প্রেরিত মেইল আসায় সেই ব্যক্তিকেও আসামি করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি সেই সাংবাদিকের বাসা/বাড়িকে ঘটনাস্থল সাজিয়ে নয়ছয় মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এরকম নাটকিয়তা মামলারও তথ্য পাওয়া যাবে সেই ঢাকার ট্রাইব্যুনাল কোর্ট আদালতে। এসকল বিষয়ে যদি অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সূদৃষ্টি না দেন তাহলে ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তি আইন হুমকির মুখে পড়বে। এতে লোকেরা তারা তাদের ন্যয্য অধিকার পাওনা থেকেও বিতারিত হবে। যে আইনের ভারসাম্যতা নেই সে আইনের ভিত্তি কোথায়?

সম্পাদকীয় কলাম।।

শেয়ার করুন!