
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মন্দবাগ নামক স্থানে দুটি ট্রেনে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ভোর ৪টার দিকে উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের ক্রসিংয়ে আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ট্রেন দুটো দুই দিকে যাচ্ছিল। কর্মকর্তারা জানান, উদয়ন এক্সপ্রেস ও তূর্ণা নিশীথার মধ্যে এ সংঘর্ষ ঘটে চলন্ত অবস্থায়। উদয়নকে লুপ বা সাইড লাইনে যখন পাঠানো হচ্ছিল তখন এর পেছনের তিনটি বগি মূল লাইনে থাকতেই ঢাকাগামী তূর্ণা চলে আসে এবং এ সংঘর্ষ ঘটে।
জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা সকাল সোয়া সাতটায় জানান, এ পর্যন্ত ১৫ জন নিহত হওয়ার ব্য্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে ৯ জন, কসবা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিনজন, বৃাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে দুই জন ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়।
মন্দবাগ স্টেশনের মাস্টার জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, তূর্ণার চালক তথা লোকো মাস্টারকে ট্রেন থামানোর জন্য আউটার ও হোম দুই স্থানেই লাল বাতি সংকেত দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত চালক ট্রেন দাঁড় করাননি বলেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।
কর্মকর্তারা জানান, মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বগির নিচে আরো মরদেহ থাকতে পারে। হতাহতদের উদ্ধার কাজ চলছে। অনেকের কাটা হাত-পা উদ্ধার হচ্ছে। এ দৃশ্য অসহনীয়। সম্ভবত একটি শিশু ভেতরে রয়ে গেছে। সকাল ৭টা নাগাদ তাকে জীবিত বা মৃত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিহত একটি শিশুর পরিচয় পাওয়া গেছে। মেয়েটির নাম সোহানা। বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায়। শিশুটির চারজন স্বজন গুরুতর আহত। নিহত অন্যদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্স এ মুহূর্তে ঘটনাস্থলে রয়েছে। মসজিদ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে উদ্ধারে ও সেবায় এলাকাবাসীকে এগিয়ে আসার জন্য।
আখাউড়া রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল কান্তি দাস দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। দুইটি ট্রেনের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে।
দুর্ঘটনায় উদয়নের দুটি বগি দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঢাকার সঙ্গে সিলেট ও চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডিউটি অফিসার বরকত উল্লাহ।
তিনি জানিয়েছেন, এরইমধ্যে তাঁদের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে। তাঁরা ফিরে আসার পরেই জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল কায়সার ভূঁইয়া জীবন জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। হতাহতদের পরিচয় পেলেই জানানো হবে। আর আটকে পড়া যাত্র্রীদের খাবারের ব্য্যবস্থাও করেছে উপজেলা প্রশাসন। চেয়ারম্যান আরো জানান, আইনমন্ত্রী উপজেলা চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন যাত্রীদের সুবিধামতো স্থানে পৌছে দেয়ার জন্য যেন পর্যাপ্ত গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। আইনমন্ত্র্রীর বাড়ি এই কসবা উপজেলায়।
এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ঘটনাস্থলে গেছেন।
জেলা প্রশাসক জানান, এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে আপাতত, মরদেহ নেওয়ার সুবিধার্থে। এ ছাড়া আহতদের সেবায় জেলা প্র্রশাসনের তত্ত্বাবধান থাকবে।
রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলীয় প্র্রধান প্রকৌশলী শফিক তুহিন জানান, তিন থেকে চার ঘণ্টা লাগবে উদ্ধারকাজ শেষ করতে। জেলা প্র্রশাসক বলেছেন, রেলমন্ত্রী ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।