
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :
বর্ণাঢ্য আয়োজন ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে শেষ হয়েছে মণিপুরি সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা। গতকাল ভোরে এ মহাআয়োজনের সমাপ্তি হয়। কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে রাসনৃত্যের বর্ণিল এ উৎসব উপভোগ করতে হাজির হয় বিভিন্ন এলাকার হাজারো মানুষ।
মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ মাধবপুর শিববাজার ও আদমপুর কালচারাল কমপ্লেক্সে গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে গোধূলি পর্যন্ত কৃষ্ণের বাল্যলীলা অনুসরণে রাখালনৃত্যে অংশ নেয় মণিপুরি সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোররা। রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত চলে শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা।
এর আগে মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের উদ্যোগে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সম্প্রদায়ের ১৭৭তম মহারাস উৎসব উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, গুণীজন সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মঙ্গলবার রাতে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর জোড়ামণ্ডপ প্রাঙ্গণে এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সভাপতি প্রকৌশলী যোগেশ্বর সিংহের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মল্লিকা দে, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক। অনুষ্ঠানে মণিপুরি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ হরিমোহন সিংহ, ডা. স্বপন কুমার সিংহ, প্রভাক কুমার সিংহ, মৃদঙ্গবাদক রাজেন্দ্র কুমার সিংহ ও ধনেশ সিংহকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
আয়োজকরা জানান, মণিপুরের মহারাজা ভাগ্যচন্দ্র সিংহ ১৭৭৯ সালে এ রাস উৎসব শুরু করেন। এর পর থেকে কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী মণিপুরিদের প্রধান ধর্মীয় মহোৎসব শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা পালিত হয়ে আসছে। ১৯২৬ সালে সিলেটের মাছিমপুরে মণিপুরি রাসনৃত্য উপভোগ করে মুগ্ধ হয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। পরে কবিগুরু কমলগঞ্জের নৃত্য শিক্ষক নীলেশ্বর মুখার্জিকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে প্রবর্তন করেছিলেন মণিপুরি নৃত্য শিক্ষা।
মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, শুধু নিজস্ব আচার নয়, সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন আর অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক হয়ে উঠেছে মণিপুরিদের এ ধর্মীয় উৎসব।