
সিএনবাংলাদেশ অনলাইন :
ছবি : সংগৃহীত । টানা ঊর্ধ্বগতির পর সামান্য কমেছে পেঁয়াজের দাম। গতকাল রাজধানীতে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের মূল্য ১৫-২০ টাকা কমে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হয়। বার্মার পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। দাম কমলেও পেঁয়াজের বাজার ছিল অস্বাভাবিকই। ক্রেতারা জানিয়েছে, সামান্য কমলেও এখনো সাধারণের ক্রয়সামর্থ্যরে বাইরে রয়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। এ দামে পেঁয়াজ কেনা সবার পক্ষে সম্ভব নয়।
এদিকে বাজার সামাল দিতে নড়েচড়ে বসেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মিসর থেকে কার্গো বিমানে আমদানি করা পেঁয়াজের প্রথম চালান দেশে আসছে আগামীকাল মঙ্গলবার। রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছামাত্র খালাসের পর পরই তা বাজারে ছাড়া হবে। কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়া দ্রুততম সময়ে পেঁয়াজ যেন খালাস করা হয় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এক বৈঠক থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীনের সভাপতিত্বে বিমান বাংলাদেশ কার্গো হ্যান্ডেলিংস, সিভিল
এভিয়েশন অথরিটি, কাস্টম হাউস, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
কার্গো বিমানে পেঁয়াজের প্রথম চালান আসছে মিসর থেকে। এ চালান নিয়ে আসছে বৃহত্তর ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম। পর্যায়ক্রমে অন্য আমদানিকারকদের পেঁয়াজও কার্গো বিমানে আসবে। বিমানের পেঁয়াজ খালাসে কোনো ধরনের জটিলতা আছে কিনা, তা-ও জানতে চাওয়া হয় বৈঠকে। পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তুরস্ক, মিসর, আফগানিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জরুরি ভিত্তিতে কার্গো বিমানে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে বলেও জানানো হয়।
পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক করার চেষ্টায় ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। হঠাৎ অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় মধ্যবিত্তসহ সাধারণ ও নিম্ন আয়ের ক্রেতারা ছুটছেন টিসিবির পেঁয়াজ কিনতে। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে টিসিবিও।
এদিকে খামারবাড়ী, কারওয়ানবাজার, নীলক্ষেত এলাকার টিসিবির ট্রাকের কাছে গিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও পেঁয়াজ পাননি অনেকে। বেশি সংখ্যক ক্রেতা যেন পেঁয়াজ পায়, সে জন্য টিসিবি মাথাপিছু বিক্রির পরিমাণ কমিয়ে এক কেজি করে। তার পরও অনেকে খালি হাতে ফিরছেন। অনেকের অভিযোগ, দল বেঁধে এসে বেশি পেঁয়াজ সংগ্রহ করছেন অনেকে।
গতকাল কারওয়ানবাজার এলাকায় বিকাল সোয়া ৪টার দিকেও টিসিবির ট্রাকের সামনে দেখা গেছে বিশাল লাইন। অথচ ট্রাকে পেঁয়াজ শেষের দিকে। পেঁয়াজ পেতে লাইন ভেঙে হুড়াহুড়ি বাধিয়ে দিচ্ছেন ক্রেতারা। তাদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারাও।
কারওয়ানবাজারের ট্রাক সেলের বিক্রেতা সোহেল জানান, গত কয়েক দিন ধরে ক্রেতার সংখ্যা চার-পাঁচগুণ বেড়ে গেছে। বিক্রির সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে ঘাম ছুটে যাচ্ছে। পেঁয়াজ শেষ হয়ে গেলে আরেক বিপদ। ক্রেতারা আমাদের ওপরই চড়াও হন।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, রাজধানীতে বর্তমানে ৩৫টি ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি চলছে। ট্রাকপ্রতি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই। তবে ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকায় ট্রাকের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
ময়মনসিংহে খুচরা বাজারে কয়েক দিন ধরে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। গতকাল রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ নগরের মেছুয়াবাজার এলাকার পেঁয়াজের আড়ত ও খুচরা বাজারে অভিযান চালান জেলা পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন (অতিরিক্ত ডিআইজি)। পুলিশের অভিযানের কথা জেনে সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিকেজিতে ৫০ টাকা কমিয়ে ১৭০ টাকায় বিক্রি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা
।
পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন বলেন, ‘সচেতনতা তৈরি এবং ব্যবসায়ীদের সতর্ক করতেই আমরা অভিযান চালাচ্ছি। শুধু জেলা শহরে নয়, এমন অভিযান চলবে উপজেলা ও গ্রামপর্যায়ের হাটবাজারগুলোয়ও।’
ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বাজার থেকে ১৭০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ ক্রয় করা হয়। ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছিল। এক কেজি পেঁয়াজে ব্যবসায়ীরা লাভ করছিলেন ৫০ টাকা। পরে এসপি সাংবাদিকদের বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে কেউ সিন্ডিকেট করলে তাৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজারে গোয়েন্দারা কাজ করছে। তারা সব তথ্য সংগ্রহ করছে। দাম নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাবধান করা হয়েছে ব্যবসায়ীদের। এর পর অনিয়ম পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি সবাইকে এ ব্যাপারে সজাগ হওয়ার অনুরোধ করেন।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজের ঝাঁজ কমতে শুরু করেছে। একলাফে একদিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে প্রতিকেজিতে দাম কমেছে ৫০-৬০ টাকা। যে পেঁয়াজ গত শনিবার খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, সেই পেঁয়াজ গতকাল রবিবার প্রকারভেদে বিক্রি হয় ১৫০-১৬০ টাকায়। বাজারে আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কমতে শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে প্রশাসন মনিটরিং শুরু করায় পেঁয়াজের দাম কমছে বলে জানা যায়।
হিলির কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা গত শনিবার পাইকারি বাজার থেকে ১৯০-১৯৫ টাকা কেজি কেনেন। সেই পেঁয়াজ গতকাল খুচরা বাজারে ১৪০-১৫০ টাকা, কোথাও কোথাও ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ করে বাজারে পেঁয়াজ আমদানি বেশি হওয়ায় ও পাতা পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কমতে শুরু করেছে বলে তারা মনে করেন।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে রিট :
স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট হয়েছে। এতে অস্বাভাবিকভাবে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ গতকাল রবিবার এ রিট করেন।
আবেদনটি বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের বেঞ্চে শুনানির জন্য উত্থাপন করা হয়। আবেদনের বিষয়বস্তু শুনে আদালত বলেন, এক সপ্তাহ দেখেন। এর মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমরা হস্তক্ষেপ করব। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ।
রিটে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়। এতে বাণিজ্য সচিব, কৃষি সচিব, দুদকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।